* কাঠের চশমায় যেনো ধরেছে মরিচা ?
* মতিঝিল বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনারের আত্মীয় পরিচয়ে আবারও ক্যাসিনো সাঈদের সহযোগির নিয়ন্ত্রনে ক্যাসিনো জুয়া !
* দেশের প্রচলিত আইনে ভাগ্য নির্ণয় করে এমন যে কোন ধরনের খেলা জুয়া – প্রধান বিচারপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর প্রায় বন্ধ রয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের ক্লাব পাড়াসহ বেশিরভাগ ক্লাবের জুয়ার আসরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান করেন র। এরপর একে একে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য ক্লাবগুলোতে র্যাবের ধারাবাহিক অভিযানে বেরিয়ে আসতে থাকে ক্যাসিনোর অন্ধকার জগৎ। তারপর থেকে রাজধানীর ক্লাবের জুয়ার আসর গুলো বন্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে মতিঝিল এলাকার আরামবাগ ক্রীরা সংঘ নামক ক্লাবটি আবারও ক্যাসিনো জুয়ার আসর শুরু করেছে আর এই জুয়ার আসরটি পরিচালনা করছেন সাবেক কাউন্সিলর ক্যাসিনো সাঈদের সহযোগি নজরুল বাহিনী গং।
তবে এই ক্লাব গুলোর জুয়ার আসরে প্রতি রাতে উড়ছে কোটি কোটি টাকা। কেউ ফিরে নিস্ব হয়ে আবার কেউ ফেরে টাকার বস্তা নিয়ে। এমনি করেই দিনের পর দিন জুয়া খেলায় হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। তারপর ও থেমে নেই জুয়ার আসর। লোভ সামলাতে না পেরে অনেকেই পথে বসছেন। এতে পারিবারিক অশান্তিসহ সামাজিক নানা অসংঘতি বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হলেও জুয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের চক্র।
সকাল থেকে গভীর রাত পযন্ত তিন তাস, নয় তাস, কাটাকাটিসহ বাহারী নামের জুয়া চালিয়ে আসছে চক্রটি। অথচ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও অভিযোগ রয়েছে, মতিঝিল বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনারের আত্মীয় পরিচয়দাতা ক্যাসিনো সাঈদের সহযোগি নজরুল ইসলাম মতিঝিল থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কিছু কর্মকর্তা ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ক্লাবে জুয়া চালিয়ে আসছে এবং জুয়ার আসরটিতে স্থানীয় মতিঝিল এলাকা নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছেন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন মিতু ।
গত কয়েকদিনে মতিঝিল এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুবদল নেতা বিপ্লব হোসেন মিতু আরামবাগ ক্লাবের জুয়ার আসর
আংশিক ভাগ করে দিয়েছেন, ক্যাসিনো সাঈদের সহযোগি নজরুল ইসলামও হিরন মিয়া নামক ব্যক্তিদের চুক্তি ভিত্তিক দৈনিক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের দৃষ্টিতে জুয়া খেলা শুধু একটিমাত্র অপরাধ হলেও এটিকে ঘিরে আরও অনেক অপরাধের জন্ম হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি থেকে শুরু করে পারিবারিক সহিংসতা এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরির নেপথ্যে জুয়া অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট ঢাকার অভিজাত ১৩ ক্লাবসহ সারা দেশে সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ বলে রায় দেয়। এবং দেশের কোথাও ‘জুয়ার উপকরণ’ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চের ওই রায়ে আরও বলা হয়, যেসব খেলার ফলাফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ‘ভাগ্য’ দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া খেলা। আদালত বলেছে, হাউজি, ডাইস, ওয়ান টেন, কাটাকাটি ও চরচরির মতো খেলাগুলো দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আইনে এসব খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের খেলার অনুমতি, খেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব খেলার সরঞ্জাম জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
জুয়া পারিবারিক-সামাজিক শান্তি বিনষ্টের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির সংবাদ বিডি”কে বলেন, “জুয়া এখন ‘ব্যবসার’ অংশ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিদ্যমান বৈধ আয়ের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক হলেও ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি ঘটছে। এটা এক ধরনের প্রতারণা। সোজাপথে আয় না করে মানুষ এখন এই ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। এতে ধূর্ত ও চতুরেরা টাকার কুমির হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণেরা প্রতাারিত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এটা চলে আসছে। যতদিন যাচ্ছে ততই বিচ্যুতি ঘটছে মূল্যবোধের। কষ্টার্জিত উপার্জনের পথে না গিয়ে জুয়া, প্রতারণা বা কৌশলে আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এতে সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি করছে।”
আইনের দৃষ্টিতে জুয়া শুধু একটিমাত্র অপরাধ হলেও এটি অসংখ্য অপরাধের জন্ম দিচ্ছে উল্লেখ করে এই সমাজ বিজ্ঞানী বলেন, ‘চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী নির্যাতন থেকে শুরু ভয়ংকর সব অপরাধ কর্মকাণ্ডের দিকে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে জুয়া। জুয়ার কারণে যৌতুকের মতো ঘটনাও বেড়েছে। এরকম হাজারো অপরাধের জন্ম দিচ্ছে এই জুয়াড়িরা। পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি বিনষ্টের অন্যতম কারণ এই জুয়া খেলা।’
ঢাবির অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির আরও বলেন, ‘জুয়ার নেতিবাচক প্রভাব অনেক সুদূরপ্রসারী। এটাকে থামাতে গেলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকে। তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আইনি দুর্বলতা থাকলে সেটিকে যুগোপযোগী করার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে আইনজ্ঞদের সমন্বিত ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।’
এবিষয়ে জানতে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিলে প্রতিবেদক ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করলেও মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন অদৃশ্য ক্ষমতার কারণে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের ক্যাসিনো জুয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নেই।
এই সাইটের সব ধরণের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্ট কপিরাইট আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই কন্টেন্ট ব্যবহারের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত ও তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমাদের নিউজ সাইটের মাধ্যমে পাওয়া যেকোনো তথ্য ব্যবহারের আগে দয়া করে সেই তথ্যের উৎস যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমাদের সাথেই থাকুন, সর্বশেষ খবর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে।