আমিনুল ইসলাম ছোটন
ভ্যান চালিয়ে কোন মতে সংসার চালান ইসমাইল হোসেন। টানাপোড়েনের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতো অবস্থা। লটারিতে ভাগ্য বদলে যাওয়ার আশায় টানা ৩ দিন ২৫টি করে টিকিট কেটেও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি ইসমাইল। টিকিট কাটতে বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে দিয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের একটি হাসপাতালে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে আছিয়া খাতুন। অর্থের অভাবে ভালো চিকিৎসা নিতে পারছে না।
ইসমাইল হোসেন পীরগঞ্জ উপজেলার ২নং ভেন্ডাবাড়ী, ইউনিয়নের বাসিন্দা । ইসমাইলের মতো অনেকে ভাগ্যের চাকা বদলানোর জন্য টিকিট কেটে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে আর লটারি নামক জুয়া চালিয়ে আসছে মামুন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠান ?
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার রানীসংকেল রোড ডায়বেডিক্স হাসপাতালের পাশেই ফাঁকা মাঠে শিল্প বাণিজ্য মেলার নামে রমরমা চলছে “ওঠাও বাচ্চা” লটারির নামক জুয়া।
অভিযোগ রয়েছে , কথিত কিছু নামধারী গণমাধ্যমকর্মী সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদ নাম ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে এই লটারি নামক জুয়া পরিচালনা করতে সহায়তা করছেন এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের মামুন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠান ম্যানেজ করে চলছে শিল্প বাণিজ্য মেলা। মেলার মুল ফটকে ব্যায়বহুল অর্থ খরচ করে সাজসজ্জা গেটে শিল্প বানিজ্য মেলার সাইনবোর্ড দিয়েছেন মেলার নামে লটারি নামক জুয়া চালানোর জন্য চক্রটি ভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন লটারি টিকিটের উপর প্রবেশ টিকিট নাম ব্যবহার করে পীরগঞ্জ উপজেলা সহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় শতাধিক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা দিয়ে মাইকিং করে বিভিন্ন লোভনীয় প্রলোভন দিয়ে নাম দিয়ে নামমাত্র পুরষ্কার দিয়ে প্রতিদিন লুটপাট করা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শিল্প বাণিজ্য মেলার নামে চটকদারি পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়ে চলছে লটারির মাইকিং আর একাধিকবারে মাইকে বলছে লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কারের প্রলোভন দিয়ে আসছে । লটারির প্রতিদিনের টিকিট মূল্য ২০ টাকা। যদিও প্রচার ইজিবাইকের পিছনে লেখা আছে প্রবেশের টিকিটের উপর পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান কিন্তু শতাধিক ইজি বাইকে উপজেলা জুড়ে মাইকিং করে চটকদারি পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়ে চলছে লটারি নামক জুয়ার টিকিট বিক্রি করছে আকর্ষণ হিসেবে পুরষ্কারের মধ্যে প্রথম পুরষ্কার মটর সাইকেল, ফ্রিজ সোনার দুল ও মোবাইল সহ বিভিন্ন পুরষ্কার হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। টিকিট ফেলার জন্য ১১০টি বক্স ও প্রচারণার জন্য ১১০টি ইজিবাইকের এর ব্যবস্থা করেছেন 'ওঠাও বাচ্চা' লটারির ড্র টিকিট উঠাই বাচ্চাটি।
পীরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে প্রচারণার জন্য একজন ইজিবাইক চালককে দেয়া হচ্ছে এক হাজার টাকা। উপজেলার বাইরে গেলে দেড় হাজার। এক একজন প্রচারকারি পাচ্ছেন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। যারা বিভিন্ন স্থানে বসে টিকিট বিক্রি করছেন তারা প্রতিদিন পাচ্ছেন পাঁশত থেকে সাতশত টাকা।প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন প্রতিদিন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চক্রটি।
রাত ১০টার পরপরই লটারি শুরুতেই দর্শণার্থী এক বাচ্চাকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে তার চোখে কালো কাপড় বেঁধে চারকোনায় চারজনকে দাঁড় করিয়ে কাপড় টানিয়ে ঢালা হয় বিক্রিত টিকিটের মুড়ি বা ছোট অংশ। এরপর ওই বাচ্চা একএক করে নির্ধারিত পুরষ্কারের আলোকে সেই কয়টি লটারির টিকিটের মুড়ি অংশ তুলে ধরে সকলের সামনে। পরে ওই লটারির নাম্বার ঘোষণা দেয়া হয়।
গত এক তিন দিনের পুরষ্কারের হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার পুরষ্কার দেয়া হয়। অথচ প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। সেক্ষেত্রে এক মাস মেলা চললে এক মাসের বিক্রিত টিকিট মূল্য থেকে পুরষ্কার মূল্য, ইজিবাইক, প্রচারকারি, ডেকরেটরসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মোট ৬০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, আমাদের উপজেলার সাধারণ মানুষের জুয়ার নেশায় আসক্ত করছেন এবং তারা আরো বলেন রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে আমরা যাবো কোথায় এবং সাহস করে প্রতিবাদ ও করতে পারছেন না কেনবা আয়োজনকারি প্রতিষ্ঠান মামুন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব চালিয়ে আসছে ?
এছাড়াও আরো জানান, লটারি টিকিট কেটে পুরষ্কারের নামে বাড়ছে চুরি ও ছিনতাই। বাড়ি থেকে জিনিসপত্র ও টাকা চুরি করে লটারি টিকিট কিনতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকা দিয়ে প্রতিদিন মোটা অংকের লটারির টিকিট কিনতে যেয়ে অনেকেই হচ্ছেন সর্বশান্ত। আবার ঘটছে পারিবারিক অশান্তি অবিলম্বে এ লটারি বন্ধের দাবি জানান স্থানীয়রা।
অন্যদিকে ৫নং ইউনিয়ন এর বাসিন্দা রুবেল হোসেন পেশায় বাসের হেলপার। প্রতিদিন যে আয় হয় তাতে ১০টির বেশি টিকিট কেনা যায় না। বন্ধুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেশি টিকিট কিনেছেন। এখন আর কেউ টাকা না দেয়ায় বাড়ির লোহার শাবল চুরি করে শুক্রবার রাতে ৯০ টাকায় বিক্রি করে অতিরিক্ত চারটি টিকিট কিনেও পুরষ্কারের ভাগ্য খোলেনি রুবেলের।
একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ইমান আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম নজু পুরষ্কারের লোভে প্রতিদিন ১০০ থেকে দেড়শত টিকিট কিনেছেন। বিক্রি করেছেন তার পালিত হাঁস মুরগি। গত ৩ দিনে লটারির পিছনে খরচ করেছেন ৮০০০ হাজার টাকা। প্রতিবাদ করায় বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নীরব অভিযোগ করে একাধিক ব্যক্তি বলেন, বাণিজ্য মেলা ভালো কিন্তু এমন জুয়া খেলা ঠিক না, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে টিভিতে বা মাঠে চলে গিয়ে র্যাফল ড্র দেখে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সঠিক নজরদারি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তারা।
স্থানীয়রা আরো জানান, র্যাফেল ড্র নামক জুয়া খেলার ড্র স্থানীয় ক্যাবল টিভি চ্যানেলের মাধ্যমেও প্রচার করছে। ফলে প্রতিদিন রাত ১০ থেকে র্যাফেল ড্র’র নামক জুয়ার ফলাফল দেখার জন্য শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ টিভি চ্যানেলের সামনে বসে থাকে, এসকল লোভনীয় পুরস্কারের প্রলোভনে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। শিশু, বয়োজেষ্ঠ্য থেকে সব শ্রেণির মানুষ লোভে পড়ে কিনছেন এসব লটারি। এসব কারণে এলাকায় চুরি ও অন্যায়-অত্যাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।
এসকল বিষয় নিয়ে ( ডিপিবিএস) নামক আইন সহায়তা কেন্দ্র জনস্বার্থে দির্ঘদিন কাজ করে আসছেন এবং উচ্চ আদালতেও দারস্থ হয়েছেন। প্রতিবেদক সংস্থাটির আইনজীবী ব্যারিষ্টার সৈয়দ আরিফুর রহমানের সাথে উক্ত বিষয়টি নিয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পীরগঞ্জ ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় শিল্প বাণিজ্য মেলার নামে কৌশল অবলম্বন করে প্রবেশ টিকিট নাম ব্যবহার করে লটারি নামক জুয়া চালিয়ে আসছে মেলা আয়োজক কতৃপক্ষ
দেশের প্রচলিত আইনে শুধু একটি মাত্র অপরাধ
না ? প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য একাধিক অপরাধ করছেন মেলা আয়োজক কতৃপক্ষ ।
(১) বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭'-এর ১ ধারা * কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইন, ২০০৬ * শব্দ দূষণ আইন বিধিমালা ২০০৬
শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে
জনস্বার্থে’ হাই কোর্ট বিভাগের জারি করা রুল ঘোষণা করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাই কোর্ট বেঞ্চে আদেশে বলা হয়, যেসব খেলার ফলাফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া খেলা।
এবং খেলাগুলো দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আইনে এসব খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন কোথাও চান্স’ বা ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, খেলা তাৎক্ষণিক আউনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এবং যেহতু বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর আইনগত নোটিশ পাঠাবো সংস্থার তারপর সংস্থার যে সকল কার্যকরী থাকে।
উক্ত শিল্প বাণিজ্য মেলার নামে লটারি নামক জুয়ার বিষয়টি জানতে মুঠোফোনে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও পীরগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে মেলার বিষয়ে কথা বলতে না বলতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া সমাজের নানাবিধ যেকোনো তথ্য আমাদের জানাতে পারেন।
মুঠোফোন +880 9638 333 737
ইমেইল -info@sangbadbd24.net
ওসামা বিন মাহী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত